হাজারো মানুষের শ্রদ্ধা কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে

 

Central Shaheed Minar

আজ অমর একুশে ফেব্রুয়ারি, মহান শহীদ দিবস ও আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস। এই দিনে হাজারো মানুষ কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে উপস্থিত হয়ে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন। শহীদ মিনারের বেদি শ্রদ্ধার ফুলে পরিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ আজ ভোর থেকেই প্রভাতফেরির মাধ্যমে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করছেন।

একুশের প্রথম প্রহরে ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে রাষ্ট্রপতি ও অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা পৃথকভাবে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। রাত ১২টার পর প্রথমে রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিন শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর রাত ১২টা ১২ মিনিটে অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূস শহীদ মিনারে পুষ্পস্তবক অর্পণ করে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান এবং কিছুক্ষণ নীরবতা পালন করেন।

সকাল সাড়ে ছয়টার দিকে কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠান, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ সাধারণ জনগণ শ্রদ্ধা নিবেদন করতে আসেন। কেউ একগুচ্ছ ফুল, কেউবা বিশাল তোড়া হাতে শহীদদের স্মরণ করেন। শোকের প্রতীক কালো পোশাক পরিধান করে মানুষের কণ্ঠে ধ্বনিত হয় বিখ্যাত গান, ‘আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙানো একুশে ফেব্রুয়ারি, আমি কি ভুলিতে পারি…।’

সকাল সাড়ে সাতটায় বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়ন শহীদবেদিতে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। সংগঠনের সাংগঠনিক সম্পাদক তামজিদ হায়দার সাংবাদিকদের বলেন, ‘২০২৪ সালে একটি বৈষম্যহীন সমাজ গড়ার লক্ষ্যে আমরা আন্দোলন করছি। অতীতে হাজারো ছাত্র-জনতা তাদের জীবন দিয়েছেন, ফ্যাসিস্ট শাসনের বলি হয়েছেন। আমরা এমন এক বাংলাদেশ চাই, যেখানে সকল জাতিসত্তার মানুষ তাদের নিজ নিজ ভাষায় কথা বলতে পারবেন ও মাতৃভাষায় শিক্ষা গ্রহণ করতে পারবেন।’

শহীদ মিনারে দলীয় ও সংগঠনের বাইরেও ব্যক্তি উদ্যোগে অনেকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছেন। সরকারি কর্মকর্তা রাসেল সাবরিন তার ১১ বছর বয়সী মেয়ে রাইদাকে সঙ্গে নিয়ে মতিঝিল থেকে এসে ভাষাশহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। তিনি জানান, পাঁচ বছর বয়স থেকেই মেয়েকে শহীদ মিনারে নিয়ে আসছেন, যেন সে বাংলা ভাষার গুরুত্ব বুঝতে পারে।

সকাল পৌনে আটটার দিকে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন করে। পরে সংগঠনের সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু সাংবাদিকদের বলেন, ‘গণতন্ত্র একটি চলমান প্রক্রিয়া। আমরা গণতন্ত্রের পথে হাঁটছি, তবে মাঝে মাঝে হোঁচট খেয়েছি। কিন্তু বাঙালি কখনো থেমে থাকেনি, ভবিষ্যতেও থামবে না।’

রাসেল বলেন, ‘বাংলা ভাষা অত্যন্ত সমৃদ্ধ। এ ভাষার শব্দভান্ডার, মাধুর্য ও অভিব্যক্তি বিশ্বে অতুলনীয়। আমি চাই আমার সন্তানরা বাংলা ভাষার গুরুত্ব উপলব্ধি করুক এবং বিশ্বে ছড়িয়ে দিক।’

একুশে ফেব্রুয়ারির দিনটি ভাষাশহীদদের আত্মত্যাগ স্মরণে বাঙালি জাতির জন্য এক অনন্য গৌরবের দিন। শহীদ মিনারে আজও লাখো মানুষের শ্রদ্ধার ফুলে ঢেকে গেছে শহীদ বেদি, আর কণ্ঠে ধ্বনিত হচ্ছে মাতৃভাষার প্রতি ভালোবাসার অঙ্গীকার।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url