নিজের সুখ, নিজের হাতে

happiness, in own hands

জীবনের পথে চলতে গেলে আমরা নানা রকম চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি হই। কখনো সফলতা আসে, কখনো ব্যর্থতা। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো—আমাদের সুখ আমাদের নিজেদের হাতেই থাকা উচিত। নিজের সুখের চাবিকাঠি যদি অন্যের হাতে তুলে দেই, তাহলে জীবনটা তাদের ইচ্ছামতো পরিচালিত হবে, আমাদের ইচ্ছামতো নয়। তাই জীবনের প্রতিটি মুহূর্তে নিজেদের সুখের দায়িত্ব নিজেদেরই নিতে হবে।

নিজেকে ভালোবাসা এবং যত্ন নেওয়া

নিজেকে ভালোবাসা মানেই আত্মকেন্দ্রিকতা নয়, বরং নিজের প্রতি যত্নশীল হওয়া। আমাদের অনেকেই নিজেদের চেয়ে অন্যদের বেশি গুরুত্ব দেই, অন্যের দৃষ্টিভঙ্গি নিয়ে বেশি চিন্তা করি। কিন্তু এটা আমাদের মানসিক শান্তি ও সুখকে নষ্ট করতে পারে। তাই প্রতিদিন কিছুটা সময় নিজের জন্য বরাদ্দ রাখা উচিত। সকালে উঠে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে নিজেকে বলুন—'আমি ভালো আছি, আমি ভালো থাকব।'

নিজের যত্ন নিতে হলে শারীরিক ও মানসিক উভয় দিক থেকেই সচেতন হতে হবে। নিয়মিত ব্যায়াম করা, পুষ্টিকর খাবার খাওয়া, পর্যাপ্ত ঘুমানো এবং মনের প্রশান্তির জন্য ধ্যান বা প্রার্থনা করা জরুরি।

অন্যের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো

আমরা প্রায়ই নিজেদের সুখের জন্য অন্যদের ওপর নির্ভর করি। কাছের মানুষ, পরিবার, বন্ধু-বান্ধবের কাছ থেকে ভালোবাসা ও যত্ন পাওয়ার আশা করি। কিন্তু যখন তারা আমাদের প্রত্যাশা অনুযায়ী আচরণ করে না, তখন আমাদের মন খারাপ হয়ে যায়। তাই সুখী হতে হলে, অন্যদের ওপর নির্ভরশীলতা কমানো প্রয়োজন।

যদি মন খারাপ হয়, তাহলে হেমন্তের গান শুনুন, নিজের জন্য এক কাপ ধোঁয়া ওঠা কফি বানিয়ে নিন, বিকেলের নরম রোদে হাঁটুন কিংবা প্রিয় লেখকের বইয়ে ডুব দিন। যদি কোনো সৃজনশীলতা থাকে, তাহলে সেটাই হোক আপনার সঙ্গী। এই ছোট ছোট বিষয়গুলো আমাদের মন ভালো রাখতে সাহায্য করে।

সৃজনশীলতার সঙ্গে সম্পর্ক গড়ে তোলা

সৃজনশীলতা মানসিক শান্তির অন্যতম চাবিকাঠি। ছবি আঁকা, লেখালেখি, গান শোনা, বাগান করা কিংবা যেকোনো শখের কাজ আপনাকে মানসিক স্বস্তি এনে দিতে পারে। ব্যস্ততার মাঝেও নিজের শখের জন্য কিছু সময় বের করে নিন।

নেতিবাচক চিন্তা পরিহার করা

অনেকেই নিজেদের দুঃখ-দুর্বলতা প্রকাশ করতে সোশ্যাল মিডিয়ায় স্ট্যাটাস দেন বা অন্যদের নিয়ে ব্যঙ্গ করেন। কিন্তু এসব কাজ পরিণত মানসিকতার পরিচয় নয়। বরং একা থাকলে নিজের সঙ্গে সময় কাটানো, পুরোনো স্মৃতি মনে করা, হাসা-কাঁদা বা ধ্যান করা ভালো বিকল্প হতে পারে।

সফলতা ও ব্যর্থতার সঙ্গে সমঝোতা করা

জীবনে সফল হলে নিজেকে পুরস্কৃত করুন। যদি ব্যর্থ হন, তাহলে নিজের সঙ্গে অভিমান করুন, তবে হাল ছাড়বেন না। অন্যের চোখে নিজের পারফেকশন খোঁজার ভুল করবেন না। কারণ মানুষ আপনার গুণের চেয়ে ত্রুটিগুলোই বেশি দেখতে পছন্দ করবে। তাই নিজেকে বিশ্বাস করুন এবং নিজের লক্ষ্য ঠিক রেখে এগিয়ে যান।

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা অর্জন করা

অর্থনৈতিক স্বাধীনতা মানসিক শান্তি ও আত্মবিশ্বাসের একটি বড় উৎস। নিজের খরচের জন্য অন্যের মুখাপেক্ষী হওয়া সুখকর নয়। তাই নিজেকে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী করে তুলুন। মুড অফ থাকলে নিজের জন্য এক টুকরো চকলেট কিনতে পারেন, নিজের জন্মদিনে নিজেকে উপহার দিতে পারেন। এমনকি সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের সঙ্গে জন্মদিনের আনন্দ ভাগ করে নিতে পারেন।

'না' বলতে শেখা

সবাইকে খুশি করা সম্ভব নয়। পৃথিবীর কেউই সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হতে পারেনি। তাই যেখানে প্রয়োজন, সেখানে 'না' বলতে শিখুন। নিজের মানসিক শান্তির জন্য কিছু বিষয় থেকে দূরে থাকাই শ্রেয়।

মানসিক চাপ থেকে মুক্ত থাকার কৌশল

অনেকে বলেন, ‘আমার বাবা-মা আমাকে বোঝে না, বন্ধুরা আমাকে সময় দেয় না, কাছের মানুষ আমাকে অবহেলা করে।’ কিন্তু এসব চিন্তাভাবনা আমাদের নিজেদের তৈরি করা মানসিক চাপ। অন্যদের পরিবর্তন করা সম্ভব নয়, তবে নিজের দৃষ্টিভঙ্গি পরিবর্তন করা সম্ভব। জীবনে নেতিবাচক দিকগুলোর চেয়ে ইতিবাচক দিকগুলোর ওপর বেশি ফোকাস করুন।

সুখী থাকার ছোট ছোট উপায়

  • প্রতিদিন সকালে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করা

  • নির্জনে কিছুক্ষণ বসে থাকা ও আত্মবিশ্লেষণ করা

  • নিজের কাজের প্রতি ভালোবাসা বাড়ানো

  • পরিবারের সঙ্গে সময় কাটানো

  • প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করা

  • নতুন কিছু শেখার চেষ্টা করা

  • ভ্রমণ করা

  • মাঝে মাঝে নিজেকে ফুল উপহার দেওয়া

উপসংহার

সুখ কোনো নির্দিষ্ট লক্ষ্য নয়, এটি একটি অভ্যাস। আমাদের প্রতিদিনের ছোট ছোট কাজগুলোই আমাদের জীবনে সুখ বয়ে আনতে পারে। তাই অন্যদের ওপর নির্ভর না করে নিজের সুখ নিজেই তৈরি করুন। কারণ দিনশেষে, সুখী থাকা আপনার নিজের দায়িত্ব।

Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url