৮-৮-৮ নিয়ম: শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার চাবিকাঠি

Physical and mental wellbeing

২৪ ঘণ্টা—একদিনে এই সময়টুকু আমাদের হাতে থাকে। কিন্তু এই সময়কে কীভাবে কাজে লাগানো যায়, তা নিয়ে অনেকেই চিন্তিত। অনেকে সকালেই দেরি করে ঘুম থেকে ওঠেন, ফলে দিনের পরিকল্পনা ভেস্তে যায়। আবার কেউ কেউ এতটাই কাজে মগ্ন থাকেন যে, খাওয়া-ঘুম সবকিছুই উপেক্ষা করেন। এতে করে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য ক্ষতিগ্রস্ত হয়, এবং ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনের মধ্যে ভারসাম্য হারিয়ে যায়। এই সমস্যার সমাধান হিসেবে আজকাল অনেক প্রতিষ্ঠানই তাদের কর্মীদের "৮-৮-৮ নিয়ম" মেনে চলার পরামর্শ দিচ্ছেন। কিন্তু এই নিয়মটি আসলে কী, এবং এটি কীভাবে আমাদের জীবনকে সহজ করে তুলতে পারে? চলুন জেনে নেওয়া যাক।


৮-৮-৮ নিয়ম কী?

এই নিয়মটি নতুন মনে হলেও এর উৎপত্তি কিন্তু উনিশ শতকে। ইংল্যান্ডের ওয়েলসের একজন শিল্পপতি ও সমাজ সংস্কারক রবার্ট ওয়েন প্রথম এই ধারণাটি প্রচলন করেন। তিনি ২৪ ঘণ্টাকে তিনটি সমান ভাগে ভাগ করার প্রস্তাব দেন—৮ ঘণ্টা কাজ, ৮ ঘণ্টা ঘুম বা বিশ্রাম এবং বাকি ৮ ঘণ্টা ব্যক্তিগত কাজ ও বিনোদনের জন্য। তাঁর মতে, শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় রাখতে কাজ, ঘুম এবং ব্যক্তিগত সময়ের মধ্যে সমন্বয় থাকা অত্যন্ত জরুরি।


কীভাবে এই নিয়ম কাজ করে?

১. ৮ ঘণ্টা কাজ:  

এই সময়টুকু শুধুমাত্র পেশাগত কাজের জন্য বরাদ্দ। এই সময়ে আপনি আপনার কাজে সম্পূর্ণ মনোযোগ দেবেন, যাতে কাজের গতি ও উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

২. ৮ ঘণ্টা ঘুম:  

ঘুম শারীরিক ও মানসিক সুস্থতার জন্য অপরিহার্য। গবেষণা অনুযায়ী, একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক ৭-৯ ঘণ্টা ঘুম প্রয়োজন। পর্যাপ্ত ঘুম মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে এবং শারীরিক ক্লান্তি দূর করে।

৩. ৮ ঘণ্টা ব্যক্তিগত সময়:  

এই সময়টুকু সম্পূর্ণ আপনার। এ সময়ে আপনি আপনার শখ, পরিবার, বন্ধুবান্ধব এবং নিজের যত্ন নিতে পারেন। বই পড়া, গান শোনা, সিনেমা দেখা, শরীরচর্চা করা বা প্রিয়জনের সঙ্গে সময় কাটানো—এই সবকিছুই এই ৮ ঘণ্টার মধ্যে অন্তর্ভুক্ত।


৮-৮-৮ নিয়ম মেনে চলার সুবিধা

১. শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা:

পর্যাপ্ত ঘুম এবং ব্যক্তিগত সময় মস্তিষ্ককে সতেজ রাখে এবং মানসিক চাপ কমায়। এতে করে শারীরিক ও মানসিক স্বাস্থ্য উভয়ই ভালো থাকে।

২. উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি:  

কাজের সময় নির্দিষ্ট থাকলে এবং বিশ্রামের সময় ঠিকমতো নেওয়া হলে কাজে একাগ্রতা বাড়ে। ফলে উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি পায়।

৩. জীবনে ভারসাম্য:  

এই নিয়ম মেনে চললে ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনের মধ্যে সমতা বজায় থাকে। কাজের চাপে ব্যক্তিগত জীবন যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়, তা নিশ্চিত করা যায়।


কোন সমস্যাগুলো হতে পারে?

যদিও এই নিয়মটি অনেকের জন্যই উপকারী, তবুও কিছু ক্ষেত্রে এটি মেনে চলা কঠিন হতে পারে। যেমন:

আপৎকালীন পরিষেবার সঙ্গে যুক্ত ব্যক্তিরা: 

ডাক্তার, পুলিশ বা ফায়ারফাইটারদের মতো পেশাজীবীদের ক্ষেত্রে এই নিয়ম মেনে চলা প্রায় অসম্ভব। তাদের কাজের ধরনই এমন যে, কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা থাকে না।

অনিয়মিত কাজের সময়:  

কিছু প্রতিষ্ঠানে কাজের সময় অনিয়মিত হওয়ায় কর্মীদের পক্ষে এই নিয়ম মেনে চলা কঠিন হয়ে পড়ে।


কীভাবে শুরু করবেন?

১. সময়সূচি তৈরি করুন: 

প্রথমে আপনার দিনের ২৪ ঘণ্টাকে তিনটি ভাগে ভাগ করুন—কাজ, ঘুম এবং ব্যক্তিগত সময়।

২. অগ্রাধিকার নির্ধারণ করুন:  

কোন কাজগুলো আগে করা জরুরি, তা ঠিক করুন। এতে করে কাজের সময়টুকু সঠিকভাবে ব্যবহার করতে পারবেন।

৩. নিজের যত্ন নিন:  

ব্যক্তিগত সময়ে নিজের শখ ও পছন্দের কাজগুলো করুন। এতে মানসিক প্রশান্তি বাড়বে।

৪. ধৈর্য ধরে চেষ্টা করুন: 

শুরুতে কিছুটা অসুবিধা হতে পারে, কিন্তু ধীরে ধীরে এই নিয়ম আপনার অভ্যাসে পরিণত হবে।


উপসংহার

৮-৮-৮ নিয়ম শুধুমাত্র একটি সময় ব্যবস্থাপনার কৌশল নয়, এটি একটি জীবনযাপনের পদ্ধতি। এই নিয়ম মেনে চললে আপনি শারীরিক ও মানসিকভাবে সুস্থ থাকবেন, কাজে উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং ব্যক্তিগত ও পেশাদার জীবনের মধ্যে ভারসাম্য বজায় থাকবে। তাই আজই শুরু করুন এই নিয়ম মেনে চলার চেষ্টা, এবং নিজের জীবনকে আরও সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে তুলুন।


Next Post Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url