কৃষি, কার্বন বাজার এবং টেকসই উদ্ভাবন: ইসেবী এন্টারপ্রাইজেস উদ্যোগে বিশেষ সম্মেলন
বাংলাদেশের কৃষি, পরিবেশ ও টেকসই উন্নয়ন খাতে একটি নতুন দিগন্ত উন্মোচনের লক্ষ্যে ইসেবী এন্টারপ্রাইজেস সম্প্রতি কার্বন বাজার ও টেকসই উদ্ভাবন নিয়ে একটি গোলটেবিল সম্মেলনের আয়োজন করে। খামার বাড়ির AIS সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত এই গুরুত্বপূর্ণ ইভেন্টে কৃষি ও পরিবেশ খাতের নেতৃস্থানীয় বিশেষজ্ঞ, উদ্যোক্তা, নীতিনির্ধারক এবং বিভিন্ন অংশীদার একত্রিত হন। এই সম্মেলনের মূল লক্ষ্য ছিল বাংলাদেশের কৃষি খাতে টেকসই উন্নয়ন ও কার্বন বাজারের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করা।
সম্মেলনের অতিথিবৃন্দের আলোচনার মূল বিষয়বস্তু
সম্মেলনে আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন বিজ্ঞানী ডঃ আবেদ চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন এবং কৃষি উদ্ভাবন ও টেকসইতার সম্ভাব্য প্রভাব সম্পর্কে একটি গুরুত্বপূর্ণ উপস্থাপনা দেন। তিনি বলেন, "টেকসই কৃষি উন্নয়নের জন্য প্রযুক্তিগত উদ্ভাবন ও নীতি সংহতকরণের বিকল্প নেই।"
বিশ্বব্যাপী কার্বন বাজারে বাংলাদেশের ভূমিকা, জলবায়ু অর্থায়নের সুযোগ এবং সবুজ উদ্যোগের ভবিষ্যৎ নিয়ে অংশীদার প্রতিনিধিরা একটি গতিশীল আলোচনা করেন। তারা উল্লেখ করেন, বাংলাদেশ তার কৃষি ও শিল্প খাতে টেকসই প্রযুক্তির ব্যবহার বৃদ্ধি করলে আন্তর্জাতিক কার্বন বাজার থেকে ব্যাপকভাবে লাভবান হতে পারে।
জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় নেতৃত্ব
বিশিষ্ট বাংলাদেশী-আমেরিকান শিল্পী ও জলবায়ু কর্মী মনিকা জাহান বোস সম্মেলনে বিশেষ বক্তব্য রাখেন। তিনি প্রযুক্তি, নীতি এবং সম্প্রদায়-চালিত সমাধানের মধ্যে সহযোগিতা বৃদ্ধির গুরুত্বের উপর জোর দেন। তার মতে, "জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবেলায় প্রযুক্তির পাশাপাশি জনগণের সচেতনতা ও অংশগ্রহণ নিশ্চিত করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।"
ইসেবী ইনস্টিটিউটের পরিচালক কানিজ সুলতানা পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের ভূমিকা তুলে ধরেন এবং বলেন, "জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় আমাদের কৃষকদের আরও প্রশিক্ষিত করতে হবে।" এছাড়াও, শেয়ার দ্য প্ল্যানেটের প্রতিনিধি পরিমল কুমার রায় বাংলাদেশের বর্তমান কার্বন বাজার উদ্যোগের অবস্থা তুলে ধরেন।
টেকসই কৃষি ও স্থানীয় উদ্ভাবনের সমন্বয়
সম্মেলনে নেত্রকোনার সংস্থা এএসপিএসের নির্বাহী পরিচালক মো. মুস্তাসিম বিল্লা উন্নত চুলা প্রকল্প উপস্থাপন করেন। তার মতে, "গ্রামীণ জনগণের জন্য শক্তির দক্ষ ব্যবহার নিশ্চিত করতে উন্নত চুলা একটি কার্যকর সমাধান।" ইসেবী ফাউন্ডেশনের নির্বাহী কমিটির সদস্য এবং ইন্টার্নবিডির সিইও সুজিত দাস বাংলাদেশের নতুন প্রজন্মের জন্য আসন্ন কার্বন বাজার কার্যক্রমের প্রস্তুতি ও ইন্টার্নশিপের সুযোগ সম্পর্কে বিস্তারিত আলোচনা করেন।
COP29 থেকে প্রাপ্ত শিক্ষা ও বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ
সম্মেলনে COP29 থেকে প্রাপ্ত গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হয়। বিশেষজ্ঞরা বলেন, উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুনভাবে গৃহীত কার্বন বাজার ব্যবস্থা ও অর্থায়নের সুযোগ বাংলাদেশ কীভাবে কাজে লাগাতে পারে, তা নিয়ে সুস্পষ্ট কৌশল গ্রহণ করা জরুরি। বাংলাদেশ তার টেকসই কৃষি ও পরিবেশ প্রকল্পগুলির মাধ্যমে আন্তর্জাতিক কার্বন বাজার থেকে লাভবান হতে পারে।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ও অংশীদারিত্ব
ইসেবী এন্টারপ্রাইজেস তাদের উদ্যোক্তা, প্রশিক্ষণ কর্মসূচি এবং কার্বন অফসেট উদ্যোগের মাধ্যমে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা প্রচারের প্রতিশ্রুতি পুনর্ব্যক্ত করেছে। অংশগ্রহণকারীরা জলবায়ু-স্মার্ট কৃষি এবং সম্প্রদায়-নেতৃত্বাধীন টেকসইতা কর্মসূচি বৃদ্ধির জন্য ভবিষ্যতের অংশীদারিত্বের জন্য উৎসাহ প্রকাশ করেছেন।
উপসংহার
এই সম্মেলনটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও কৃষি উন্নয়নের সাথে জলবায়ু কর্মকাণ্ডকে একীভূত করার এক গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ইসেবী এন্টারপ্রাইজেস সবুজ এবং টেকসই ভবিষ্যত গড়তে অংশীদারদের সঙ্গে একযোগে কাজ করার প্রতিশ্রুতি ব্যক্ত করেছে। তাদের এই উদ্যোগ বাংলাদেশের কার্বন বাজারে অংশগ্রহণ বৃদ্ধি করতে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবেলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
জিজ্ঞাসা ও উত্তর
১. কার্বন বাজার কী এবং এটি বাংলাদেশের জন্য কেন গুরুত্বপূর্ণ?
কার্বন বাজার হল একটি ব্যবস্থা যেখানে প্রতিষ্ঠান ও দেশগুলো নির্দিষ্ট পরিমাণে কার্বন নির্গমন সীমাবদ্ধ রাখতে পারে এবং নির্গমন কমানোর মাধ্যমে অর্জিত কার্বন ক্রেডিট বাণিজ্য করতে পারে। বাংলাদেশ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিতে থাকা একটি দেশ হওয়ায়, কার্বন বাজারে অংশগ্রহণ করে অর্থায়নের সুযোগ তৈরি করতে পারে এবং টেকসই কৃষি ও পরিবেশ সংরক্ষণের উদ্যোগকে আরও শক্তিশালী করতে পারে।
২. টেকসই কৃষি কীভাবে কার্বন নির্গমন হ্রাসে সহায়ক হতে পারে?
টেকসই কৃষি এমন পদ্ধতিগুলোকে অন্তর্ভুক্ত করে যা মাটির স্বাস্থ্য বজায় রাখে, রাসায়নিক সার ও কীটনাশকের ব্যবহার কমায় এবং পুনঃব্যবহারযোগ্য কৃষি পদ্ধতিগুলো ব্যবহার করে। এগুলো কার্বন শোষণের মাধ্যমে গ্রীনহাউস গ্যাস নির্গমন হ্রাস করতে সাহায্য করে এবং পরিবেশবান্ধব কৃষি উৎপাদন নিশ্চিত করে।
৩. ইসেবী এন্টারপ্রাইজেস কী ধরনের জলবায়ু-সম্পর্কিত উদ্যোগ গ্রহণ করছে?
ইসেবী এন্টারপ্রাইজেস কৃষকদের জন্য প্রশিক্ষণ কর্মসূচি, কার্বন অফসেট উদ্যোগ এবং প্রযুক্তিভিত্তিক টেকসই কৃষি উদ্ভাবন বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলবায়ু স্থিতিস্থাপকতা বৃদ্ধির কাজ করছে। এছাড়াও, তারা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক কার্বন বাজারের সুযোগ গ্রহণের জন্য অংশীদারদের সাথে কাজ করছে।
৪. বাংলাদেশ COP29-এ কী ধরনের সিদ্ধান্ত ও সুযোগ পেয়েছে?
COP29-এ উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য নতুন কার্বন বাজার ব্যবস্থা ও অর্থায়নের সুযোগের উপর গুরুত্ব দেওয়া হয়। বাংলাদেশ এ সুযোগের সদ্ব্যবহার করে টেকসই কৃষি, পুনর্নবীকরণযোগ্য শক্তি এবং পরিবেশবান্ধব প্রযুক্তি বাস্তবায়নের মাধ্যমে জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলার পরিকল্পনা নিতে পারে।
৫. ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান কিভাবে কার্বন বাজারে অংশ নিতে পারে?
ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান তাদের কার্বন ফুটপ্রিন্ট কমানোর মাধ্যমে কার্বন ক্রেডিট অর্জন করতে পারে এবং নির্দিষ্ট নীতিমালার আওতায় আন্তর্জাতিক কার্বন বাজারে অংশগ্রহণ করতে পারে। পাশাপাশি, তারা টেকসই কৃষি প্রকল্প ও কার্বন নিরপেক্ষ উদ্যোগে বিনিয়োগ করেও কার্বন বাজারের সুবিধা নিতে পারে।