পর্যটনে নতুন মাত্রা: মৌলভীবাজারে আদিবাসী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের উদ্যোগ

 

Indigenous cultural program in Moulvibazar
ছবি- সুমন কৈরী, আইপিডিএস

মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জে পর্যটনশিল্পকে আরও সমৃদ্ধ করতে "মৌলভীবাজার ইন্ডিজিনাস কালচারাল গ্রুপ (এমআইসিজি)" এক ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের উদ্যোগ নিয়েছে।

পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত

অদ্য বুধবার দুপুরে গোবিন্দবাড়ীতে এমআইসিজি কর্তৃক এক অনাড়ম্বর সভা অনুষ্ঠিত হয়। সভায় উপস্থিত ছিলেন আইএলও-এর কর্মকর্তা পেড্রো জুনিয়র বেলেন, সিএটি, প্রোগ্রেস প্রজেক্ট, বাংলাদেশস্থ কানাডা হাই কমিশনের সিনিয়র ডেভেলপমেন্ট উপদেষ্টা মিস রিফুল জান্নাত, আইএলও-এর চট্টগ্রাম অফিস প্রধান আলেক্সিয়াস চিছাম, ন্যাশনাল প্রজেক্ট কর্মকর্তা মুহিবুর রহমান, আইপিডিএস-এর প্রোগ্রাম কোর্ডিনেটর রিপন বানাই, আদিবাসী সাংস্কৃতিক নেতৃবৃন্দ ও স্থানীয় জনসাধারণ। আলোচনার মূল বিষয়বস্তু ছিল "পর্যটকদের বিনোদনের জন্য আদিবাসী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের প্রতিবন্ধকতা ও প্রতিকারের উপায়"।

পর্যটনে নতুন মাত্রা

মৌলভীবাজার জেলার শ্রীমঙ্গল ও কমলগঞ্জ এলাকা দেশের অন্যতম জনপ্রিয় পর্যটন কেন্দ্র হিসেবে পরিচিত। এখানে প্রতিবছর দেশি-বিদেশি পর্যটকদের আগমন বাড়ছে। পর্যটকদের আরও আকর্ষিত করতে এবং তাদের অভিজ্ঞতাকে সমৃদ্ধ করতে স্থানীয় প্রশাসন ও বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান নিয়মিত নতুন নতুন উদ্যোগ গ্রহণ করছে। তারই ধারাবাহিকতায় এবার স্থানীয় আদিবাসী সংস্কৃতি তুলে ধরতে "মৌলভীবাজার ইন্ডিজিনাস কালচারাল গ্রুপ (এমআইসিজি)" একটি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।

ব্যতিক্রমী সাংস্কৃতিক আয়োজন

প্রতিষ্ঠানটি জানায়, সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোতে, বিশেষ করে শুক্রবার ও শনিবার, শুধুমাত্র পর্যটকদের বিনোদনের জন্য স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীদের নিয়ে এই সাংস্কৃতিক আয়োজন করা হবে। এতে পর্যটকরা যেমন বিনোদিত হবেন, তেমনি আদিবাসী শিল্পীরাও তাদের সংস্কৃতিকে উপস্থাপনের সুযোগ পাবেন।

পর্যটন ব্যবসার প্রসার

দেশের বিভিন্ন ট্যুর অপারেটর ও হোটেল-রিসোর্টগুলো তাদের পর্যটকদের আকর্ষণ করতে এই সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানকে প্রমোশনাল ট্যুর আইটিনারিতে অন্তর্ভুক্ত করতে পারবে। এতে পর্যটন খাতে সংশ্লিষ্ট ব্যবসায়ীরা লাভবান হবেন, পর্যটকদের বিনোদনের নতুন মাত্রা যোগ হবে এবং স্থানীয় আদিবাসী শিল্পীদের জীবনমান উন্নত হবে।

প্রথম পরামর্শ সভা

মৌলভীবাজার ইন্ডিজিনাস কালচারাল গ্রুপ-এর প্রেসিডেন্ট শ্রী দেবাশীষ কুমার সিংহ জানান, ইতোমধ্যে বিভিন্ন আদিবাসী সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিদের সঙ্গে এই বিষয়ে প্রথম পরামর্শ সভা অনুষ্ঠিত হয়েছে। সভায় আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা (ILO), কানাডা দূতাবাস, এবং বাংলাদেশি উন্নয়ন সংস্থা আইপিডিএস-এর কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। তারা এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন এবং প্রয়োজনীয় সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন।

প্রশাসন ও জনগণের সহযোগিতার আহ্বান

শ্রী দেবাশীষ কুমার সিংহ আরও বলেন, পর্যটকদের জন্য নতুন বিনোদনের ব্যবস্থা করতে আমরা এই উদ্যোগ নিয়েছি। আমাদের বিশ্বাস, পর্যটনশিল্পের বিকাশে এটি ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে। তবে, এই উদ্যোগ সফল করতে স্থানীয় প্রশাসন ও জনসাধারণের সার্বিক সহযোগিতা প্রয়োজন।

কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি

আইপিডিএস-এর প্রকল্প সমন্বয়কারী রিপন বানাই বলেন, গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডা ও আইএলওর অর্থায়নে আইপিডিএস সিলেট ও ময়মনসিংহ বিভাগে আদিবাসী ও চা জনগোষ্ঠীর জন্য বিশেষ করে নারীদের দক্ষতা বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ট্যুরিজম, আইসিটি, এগ্রো ও কেয়ার ওয়ার্ক সেক্টরে কাজ করে যাচ্ছে। এই ধারাবাহিকতায় মৌলভীবাজার জেলার বিভিন্ন আদিবাসীদের সমৃদ্ধ সংস্কৃতি ও ঐতিহ্য পর্যটকদের কাছে তুলে ধরার সুযোগ রয়েছে। এটি যেমন নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে, তেমনি আন্তর্জাতিক পর্যায়ে আদিবাসী সংস্কৃতির প্রচারেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

সহযোগিতার আশ্বাস

আইএলও কর্মকর্তা পেড্রো জুনিয়র বেলেন এবং বাংলাদেশস্থ কানাডা হাই কমিশনের সিনিয়র ডেভেলপমেন্ট উপদেষ্টা মিস রিফুল জান্নাত উভয়েই এই সম্ভাবনাময় উদ্যোগকে সফল করতে সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদানের আশ্বাস দিয়েছেন। তারা আইপিডিএস-কে প্রযুক্তিগত ও প্রয়োজনীয় সহযোগিতা প্রদানের নির্দেশনাও দেন।

সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের বিস্তারিত তথ্য শীঘ্রই জানানো হবে। পর্যটনপ্রেমীদের জন্য এটি হবে এক নতুন অভিজ্ঞতা, যা মৌলভীবাজারের পর্যটনশিল্পকে নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে।

Previous Post
No Comment
Add Comment
comment url